ঢাকা | সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ [email protected] +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩

খরতাপে পুড়ছে রাজশাহী, দেখা নেই বৃষ্টির

মো: মনিরুল ইসলাম | প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২২ ০৪:৪৭

মো: মনিরুল ইসলাম
প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২২ ০৪:৪৭

ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের মহিষকুন্ডি ঈদগায়ের পশ্চিম পাশে বিলে কৃষক সাদিকুল ইসলাম সরদার কচুর খেতে ছাতা টাঙ্গিয়ে কাজ করছেন। ছবি: এম এম মামুন

এম এম মামুন, রাজশাহী থেকে : চৈত্রের খরতাপে তেঁতে উঠেছে রাজশাহীর পথঘাট। বাইরে বের হলে চোখ-মুখ যেন পুড়ে যাচ্ছে। মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে এরইমধ্যে। দুর্বিষহ গরম-খরা-অনাবৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে খেতের বোরো ধানসহ সবজির খেত। তীর্যক সূর্যদহনে যেন আগুন ঝরছে পদ্মাপাড়ের সবুজ রাজশাহী। বাতাসেও ছড়াচ্ছে তাপ। এদিকে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের মহিষকুন্ডি ঈদগায়ের পশ্চিম পাশে বিলে সাদিকুল ইসলাম সরদার নামের এক কৃষক কচুর খেতে ছাতা টাঙ্গিয়ে কাজ করছেন।

ওষ্ঠাগত গরমে হাঁসফাঁস করতে শুরু করেছে এখন রাজশাহীর মানুষ। মৌসুমের প্রথম তাপদাহেই হাঁপিয়ে উঠেছে প্রাণিকূল। এরই মধ্যে লু-হাওয়া বইছে এখানে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে তাপমাত্রা। মধ্য চৈত্রের অস্বস্তিকর এই খরায় শহর ও গ্রামের দিনমজুর, শ্রমিক, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের প্রাণবায়ু যেন যায় যায় অবস্থা। আর এই দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন রোগও ছড়িয়ে পড়ছে মানবদেহে। ডায়রিয়া, জন্ডিস, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগের প্রকোপ যেমন বাড়ছে, তেমনি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে কেউ কেউ।

এ পরিস্থিতিতে ঘরে বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। কংক্রিটের ছাদ হোক বা টিনের চালা ওপর থেকে যেন আগুনই নামছে! গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নাকাল হয়ে পড়েছে। একদিকে তাপদাহ আরেক দিকে গরম বাতাস। দুপুরের পর প্রধান প্রধান সড়কগুলো এমনিতেই জনশূন্য হয়ে পড়ছে। যত দিন গড়াচ্ছে তাপমাত্রা ততই বাড়ছে। এক পশলা বৃষ্টির জন্য সবাই যেন চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছে।

আবহাওয়াবীদরা জানান, রাজশাহীতে এমন পরিস্থিতি সাধারণত বৈশাখে দেখা যায়। কিন্তু এবার চৈত্রের শুরু থেকেই তেঁতে উঠেছে প্রকৃতি। এ সময় সাধারণত ঝড়-ঝঞ্ঝা লেগেই থাকে। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলে এবার বৃষ্টির দেখা নেই। প্রকৃতি রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। খরতাপে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে রাজশাহী। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকের বেরো ধানে সেচ খরচ বাড়ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে আম-লিচুর মুকুল।

রাজশাহী আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রাজশাহীর ওপর দিয়ে গত প্রায় এক সপ্তাহ থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ চলছিল। কিন্তু গত শনিবার থেকে তা মাঝারি তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। রাজশাহীতে রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহীর আবহাওয়া অফিসের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১৬ মার্চ থেকে রাজশাহীতে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ওই দিন রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর গত ১৯ মার্চ রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর তাপমাত্রা সামান্য কমলেও তা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরেই ওঠানামা করছিল।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাজিব খান বলেন, রবিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগে শনিবার বেলা তিনটায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বিএআরআই উদ্যানতত্ত্ব ফল বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন বলেন, বিরাজমান আবহাওয়া আম বা লিচুর জন্য ক্ষতিকর নয়। মার্চ মাসে এ ধরণের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা থাকে। তিনি বলেন এক্ষেত্রে আমের গুটিতে স্প্রে করতে হবে। রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড/কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক এবং কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে নির্দেশিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।

আমের গুটি ঝরা কমানোর জন্য ২% ইউরিয়া অর্থাৎ প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম হারে স্প্রে করতে হবে। কম তাপমাত্রায় অর্থাৎ সকাল বেলায় স্প্রে করা উত্তম। তিনি বলেন, আম ও লিচু বাগানে সেচ প্রদানে কোন বাধা নেই এবং ১২-১৫ দিন অন্তর অন্তর সেচ প্রদান করতে পারলে ভালোমানের ফলন নিশ্চিত হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: