ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ [email protected] +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩

৩০ বাংলাদেশির ভাগ্যবদল আমিরাতে

আশিক ইসলাম | প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৩৯

আশিক ইসলাম
প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৩৯

৩০ বাংলাদেশির ভাগ্যবদল আমিরাতে

ইউ এ ই থেকে আশিক ইসলামঃ নরসিংদীর রায়পুরার বাসিন্দা হোসাইন আলীর কাছে রবিবারের সকালটা ছিল অন্যদিনের চেয়ে আলাদা। গত পাঁচ মাস ধরে দেশে ফেরার চিন্তার খানিকটা অবসান হতে যাচ্ছে। এদিন সকালেই তার মেডিকেল চেকআপের ডাক পড়েছে। এরপর ভিসা নবায়ন হবে। 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি প্রবাসী হোসাইন আলীর সঙ্গে মেডিকেল চেকআপের সঙ্গী হয়েছেন আরও পাঁচজন প্রবাসী বাংলাদেশি। তারা হলেন- নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার সুমন মিয়া, টাঙ্গাইলের জাহিদুর রহমান, বরিশালের মিজানুর রহমান, ঢাকার দোহারের বাবুল মিয়া ও মানিকগঞ্জের মাসুদুর রহমান। তারা দেশটির কন্ট্রোল অ্যান্ড এপ্লিকেশন এমিরেটস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

গত পাঁচ মাস আগে প্রতিষ্ঠানটি তাদের পাসপোর্ট ফেরত দিলে কর্মহীন এই প্রবাসীদের দেশে ফেরা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিনের বেতন বকেয়া থাকায় খালি হাতে দেশে ফিরতে চাননি তারা পাওনা আদায়ে সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে। ওই চিঠির সূত্র ধরে ভাগ্যবদলের খবর পেলেন একই প্রতিষ্ঠানের ৩১ প্রবাসী বাংলাদেশি। তাদের একজন দেশের ফেরার প্রস্তুতি শুরু করলেও বাকিদের ভিসা নবায়ন করবে ওই প্রতিষ্ঠান। 

এর আগে ৫০ জন প্রবাসী বাংলাদেশির পাঁচ মাসের বেতন বকেয়াসহ নিজেদের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা জানিয়ে চলতি বছরের ১৭ জুন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি (মেইল) পাঠান ভুক্তভোগী শ্রমিকরা। এর দুইদিন আগে প্রতিষ্ঠানটি পাসপোর্ট ফেরত দিলে অসহায় হয়ে পড়েন তারা। এ অবস্থায় একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভারতীয়, পাকিস্তানি ও নেপালি অধিকাংশ শ্রমিক অন্য প্রতিষ্ঠানে নিজেদের ভিসা পরিবর্তন করে নেন। কিন্তু দেশটিতে বাংলাদেশিদের নতুন ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া স্থগিত থাকায় বিপাকে পড়ে যান শ্রমিকরা। 

নিশ্চিত দেশে ফেরার দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে তাই সরকারের কাছে আইনিসহায়তার আবেদন করেন তারা। এরপর প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ায় দূতাবাস। 

জানা গেছে, কর্মহীন থাকায় ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজন শ্রমিক দেশে ফিরে গেছেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছেন ৩১ জন প্রবাসী বাংলাদেশি। এর মধ্যে আবুধাবিতে ১৯ জন, মোসাফফায় ৭ জন ও দুবাইয়ে রয়েছেন ৫ জন। এদের মধ্যে আহমেদ হোসেন নামে একজন দেশে ফিরবেন। বাকিরা ভিসা নবায়নসহ কর্মস্থলে ফেরার সুযোগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি তিন মাসের বকেয়া বেতন পেয়েছেন শ্রমিকরা।

প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শ্রমিক হোসাইন আলী জানান, ২০১০ সালে কন্ট্রোল অ্যান্ড এপ্লিকেশন এমিরেটস কোম্পানিতে যোগ দেন তিনি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের শ্রমিকরা কাজ করেন এই প্রতিষ্ঠানে। শুরু থেকে স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিমাসে বেতন গ্রহণ করেন তারা। প্রতিষ্ঠান মালিক স্প্যানিশ নাগরিক অবসরে গেলে হঠাৎ গত বছরের ডিসেম্বর থেকে শ্রমিকদের বেতন প্রদান প্রক্রিয়া অনিয়মিত হয়ে যায়। কয়েকমাস পর প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে গেছে উল্লেখ করে শ্রমিকদের দেশে ফিরে যেতে বলা হয়। উপায় না পেয়ে কয়েকজন দেশে ফিরে যান।

তবে নিজেদের পাওনা অর্থ বুঝে পেতে অনড় বাংলাদেশিরা মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। 

প্রতিষ্ঠানটির আরেক শ্রমিক সুমন মিয়া জানান, প্রবাসীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ তদন্ত ও স্থানীয় আইনিব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ দূতাবাস এগিয়ে আসে। এর ফলে বকেয়া বেতন প্রাপ্তি ও নতুন করে ভিসা নবায়নের সুযোগ পায় তারা। 

একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মুন্সিগঞ্জের টুঙ্গীবাড়ী উপজেলার আহমেদ হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দায়ের করা তার অভিযোগ সোমবার (৬ নভেম্বর) তুলে নিবেন তিনি। পাসপোর্টের মেয়াদোর্ত্তীর্ণ হওয়ায় তিনি দেশে ফিরে যাবেন। 

আবুধাবি দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) লুৎফুন নাহার নাজিম সমকালকে বলেন, ‘৫০ জন প্রবাসীর অসহায়ত্বের খরব পেয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দূতাবাস। সেখান থেকে ৪৪ জন প্রবাসী অভিযোগে স্বাক্ষর করেন। এরমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রবাসী দেশে ফিরে গেছেন। যারা দেশটিতে অবস্থান করছেন, তাদের যাবতীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুনরায় ভিসা নবায়ন ও তাদের কাজে ফেরার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান মালিক সম্মতি জানিয়েছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: