
এদিকে, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচনের লক্ষ্যে সামনে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। আর শিগগিরই তফসিল ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যেকোনো দিন ভোটের তারিখ জানিয়ে মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ঘোষণা করতে পারে সংস্থাটি।
তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংলাপে বসার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি। তবে সংলাপে বসতে প্রস্তুত রয়েছে জাতীয় পার্টি।
সংলাপে বসার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি। তবে, সংলাপে বসতে প্রস্তুত রয়েছে জাতীয় পার্টি।
ঢাকার এক কূটনীতিক জানান, প্রায় বছরখানেক ধরে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বার্তা দিচ্ছে তারা। দেশটির উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, নির্বাচন ইস্যুতে মনে হয় তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে তারা। তবে যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই তো আর সংলাপ হবে না। সংলাপ হবে কি হবে না তা পুরোপুরি নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর।
তফসিল ঘোষণার আগে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। সোমবার (১৩ নভেম্বর) সেই চিঠি বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কাছে পৌঁছে দেয় ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। ডোনাল্ড লু’র লেখা চিঠি হাতে পাওয়ার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগকেও চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।
বিএনপি সংলাপে বসবে কি না, জানতে চাইলে নাম না প্রকাশের শর্তে দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, সংলাপ কে করবে বা কাকে নিয়ে আমরা সংলাপ করব? দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা কারাগারে রয়েছেন। অন্যদের পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য করা হচ্ছে। দলের প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তাহলে সংলাপটা কে করবে, কীভাবে করবে? দলটির স্থায়ী কমিটি নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সংলাপে বসা না বসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানান এই বিএনপি নেতা।
সংলাপের বিষয়ে তো আমি একা সিদ্ধান্ত নেব না। এটা দলগত সিদ্ধান্তের বিষয়। সংলাপের বিষয়ে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে পারব না
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান
গত ৩১ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের কাছে আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন যে, শর্তহীন সংলাপে বসবে রাজনৈতিক দলগুলো। এরপর সোমবার (১৩ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হলো।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি। সেখানে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। পাশাপাশি সহিংসতা পরিহার করে সব পক্ষকে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই সংলাপ চায় যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে, সেটিও তুলে ধরা হয়েছে।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শর্তহীন সংলাপের কথা বলেছে। তিনটি প্রধান দলকে এ বার্তা দিয়েছে তারা (যুক্তরাষ্ট্র)। এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার বিষয়ে আন্তরিক হতে হবে। এক্ষেত্রে ক্ষমতায় যারা আছেন, তাদের দায়িত্বটা বেশি। তবে সংলাপে বসার পর তফসিল ঘোষণা করার দরকার ছিল। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর যে আর সংলাপ করা যাবে না, তেমনটা কিন্তু নয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: