ঢাকা | শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ [email protected] +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩

ভাঙ্গায় ট্রাকের পেছনে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মা-মেয়েসহ নিহত-৩

মো: মনিরুল ইসলাম | প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৪:০১

মো: মনিরুল ইসলাম
প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৪:০১

ছবি : সংগৃহীত

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) : মেয়েদের আবদার রক্ষার্থে পরীক্ষা শেষে আনন্দ ভ্রমণে যায় পরিবার পরিজন নিয়ে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। ৪-৫ দিন শত শত কিলোমিটার ঘুরে বাড়ির সামনে এসে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন মা-মেয়ে সহ একই পরিবারের তিনজন। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন স্বামী মেয়ে ভাতিজা সহ চারজন। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (২৯শে ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সলিলদিয়া নামক স্থানে। ঘন কুয়াশার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-১২-৫৯৭৫) দাঁড়িয়ে থাকা চিনি ভর্তি ট্রাকের পেছনে চলতি অবস্থায় আঘাত হেনে ভিতর ঢুকে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। এসময় প্রাইভেটকারে থাকা সাতজনের মধ্যে তিন জন যাত্রী নিহত হন। গুরুতর আহত হন প্রাইভেটকারে থাকা বাবা দুই মেয়ে ভাতিজা সহ চারজন।

নিহতরা হলেন- ভাঙ্গা উপজেলা পৌর সদরের আতাদী গ্রামের মোসা. লাবনী বেগম (৩০), তার মেয়ে জয়নব(৪) ও নিহত লাবনির বড় ভাই শামছুল হক মোল্লার মেয়ে সুরাইয়া(১৮)।

এ সময় আহত হন, নিহত লাবনির স্বামী প্রাইভেটকার চালক মোঃ জুয়েল শেখ (৩৩), তিনি ফরিদপুরের কবিরপুর গ্রামের আঃ ওহাব শেখের ছেলে। জুয়েল বিয়ের পর থেকে শশুরবাড়ী আতাদী গ্রামে বাড়ী করে বসবাস করেন। অন্য আহতরা হলো- নিহত লাবনির দুই মেয়ে তানহা(১২), তাওহিদা(৯) ও ভাইয়ের মেয়ে তন্না(১৩)। আহত চার জনের মধ্যে তানহা, তাওহিদা ও তন্নার অবস্থা আশংকা জনক বলে জানিয়েছেন নিহতের বাবা বিল্লাল মোল্লা। তিনি জানান মেয়ে জামাই জুয়েল শেখের একটি হাত ভেঙ্গে গেছে তবে তিনি সুস্থ আছেন।অন্য নাতিরা তাদের জ্ঞান ফেরেনি তাদের নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জুয়েল শেখ সে একজন মাইক্রো মিস্ত্রি। তিনি একটি কোম্পানিতে চাকুরি করেন। তিনি তার নিজেই ড্রাইভ করে তার প্রাইভেটকার নিয়ে তারা স্বামী স্ত্রী, তার তিন মেয়ে ও তার সুমন্দির দুই মেয়ে (মোট সাতজন মিলে) গত ২৫শে ডিসেম্বর সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে আনন্দ ভ্রমণের যায়। ভ্রমণ শেষে বৃহস্পতিবার সকালে পদ্মা সেতু পার হয়ে বাড়ির কাছাকাছি চলে আসেন। ঘটনাস্থলে একটি চিনি বোঝাই ট্রাক (কুষ্টিয়া-ট -১১-০১৬০) নষ্ট অবস্থায় এক্সপ্রেসওয়েতে দাঁড়িয়েছিল। ঘন কুয়াশার কারণে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পিছনে আঘাত করে ভিতরে ঢুকে গিয়ে ঘটনাস্থলে একজন ও হাসপাতাল নেয়ার পথে দুইজন নিহত হন।

এ বিষয়ে শিবচর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আবু নাঈম মোঃ মোফাজ্জল হক বলেন, ট্রাকের চালক ও সহকারী পালিয়ে গিয়েছে। নিহত লাবনী বেগমের মৃতদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে ও বাকী দুইজনের মৃতদেহ ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। একটি ট্রাকে চিনি বোঝাইছিল ট্রাকের পিছন থেকে প্রাইভেটকারটি ঢুকে গিয়ে ঘটনাস্থলে একজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুজন মারা যায়। প্রাইভেটকারটি সম্পূর্ণ দুমড়ে মুছড়ে যায়।

এদিকে নিহত লাবনীর বাবা বিল্লাল মোল্লা বলেন, ট্রাকটি নষ্ট অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল ওখানে না দাঁড়ানো থাকলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটতো না, দাঁড়িয়ে থাকার জন্য কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল যার জন্য এই দুর্ঘটনাটি ঘটলো। আমার নাতিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক তাদের জ্ঞান এখনো ফেরেনি।

এদিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এ হাসপাতালে আনার পর একজন মারা যান। এছাড়া অপর নিহত দুইজনের মধ্যে একজন ঘটনাস্থলে ও অপর একজন ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে মারা যায় বলে জেনেছি।

এছাড়া আহত ৪ জন মেডিকেল হাসপাতালটির বিভিন্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার কারনে ঢাকা পাঠানো হয়েছে।

এদিকে আতাদি গ্রামের কমিশনার মোঃ সুমন মাতুব্বর বলেন, একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এটা দেখার মত দৃশ্য নাই। তিনজনকে একইসঙ্গে জানাজা হবে এবং ভাঙ্গা ঈদগাহ কবরস্থানে দাফন করা হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: