ঢাকা | শুক্রবার, ২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ [email protected] +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩

চুয়াডাঙ্গায় চলছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড, কৃষি বিভাগে সর্তকতা জারি

মো: মনিরুল ইসলাম | প্রকাশিত: ৮ জানুয়ারী ২০২৩ ০০:৩০

মো: মনিরুল ইসলাম
প্রকাশিত: ৮ জানুয়ারী ২০২৩ ০০:৩০

ছবি : সংগৃহীত

বিদেশবার্তা ডেস্ক : চুয়াডাঙ্গায় প্রতিদিনই তাপমাত্রা নিচের দিকে নামছে এবং শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। টানা তৃতীয় দিনের মতো শৈত্যপ্রবাহ চলছে এ জেলায়। গত বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারী) থেকে চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে এবং হিমেল বাতাস বয়ে যাওয়ার কারণে তীব্র শীতের অনুভূতি স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত করে দিচ্ছে। গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশার কারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বোরো ধানের বীজতলা ও আলুখেত রক্ষায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, শনিবার (৭ জানুয়ারী) সকাল ৯ টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৯৫ শতাংশ, যা এই মৌসুমেরও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে শুক্রবার (৬ জানুয়ারী) সকাল ৯ টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৯৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারী) সকাল ৬ টায় রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৯৭ শতাংশ।

তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারী) থেকে টানা তিনদিন এ জেলার উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ শৈত্যপ্রবাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। শীতে কৃষি ফসলের ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা। ইতিমধ্যেই বীজতলা বিবর্ণ হওয়া শুরু হয়েছে। আর শীতজনিত রোগি বেড়েই চলেছে হাসপাতালে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে ৩৬ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ জন্য ১ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। কৃষকদের সকল ধরনের সহযোগীতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। কৃষকদের ধানের বীজতলা রক্ষায় সকালে চারার ওপর থেকে শিশির সরিয়ে দেওয়া এবং চারা রাতের বেলায় ঢেকে দেওয়া পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বীজতলা লাল হয়ে গেলে জিপসাম ও ইউরিয়া সার দিতে বলা হচ্ছে’।

সদর উপজেলার আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের কৃষক টিপন আলী জানান, ঘন কুয়াশার কারণে ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বীজতলার নিচের দিকে গোড়ায় পঁচন ধরেছে এবং আগার দিকে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। সকালের ঠান্ডা বাতাসের দাপটে ও ঘন কুয়াশায় মাঠে যেয়ে কাজ করা যাচ্ছে না।

চুয়াডাঙ্গার শহীদ হাসান চত্ত¡রের কিছু ভ্যান ও অটোরিক্সা চালকরা জানান, প্রচন্ড ঠান্ডার কারনে থাকায় মানুষের আনাগোনা কমে গেছে। খুব প্রয়োজনীয় কাজ না থাকলে কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। খোলা ভ্যানে ঠান্ডা বাতাসের কারণে কেউ উঠতে চাচ্ছে না। এতে আমাদের আয় রোজগার কমে গেছে। যারা ভাড়ায় অটোরিক্সা ও ভ্যান চালায় তারা সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। কারণ তাদের আয় রোজগার না হলেও তাদের ভাড়ার টাকা মহাজনকে পরিষোধ করতে হবে।

চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীত বাড়ার সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগির সংখ্যাও বাড়ছে। হাসপাতাল গুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফাতেহ আকরাম দোলন জানান, ১০০ শয্যার বিপরীতে প্রায় ৩ শতাধিক রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ৬০০ থেকে ১ হাজার রোগী ।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, ‘এই শীতে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তীব্র শীতে হিমেল বাতাসের কারণে বেশি নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগিদেরকে চিকিৎসা, সবাইকে সচেতন থাকা এবং টাটকা ও গরম খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে’।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান জানান, চুয়াডাঙ্গাতে সরকারি উদ্যোগ এ পর্যন্ত ২১ হাজার ১০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩০ হাজার কম্বলের চাহিদা জানিয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগেও অনেক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, ব্যাক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: