ঢাকা | রবিবার, ৪ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২ [email protected] +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩

কঠোর কর্মসূচির হুমকি ব্যাটারিচালিত রিকশা-সংশ্লিষ্ট দুই সংগঠনের

সেলিম সোহেল | প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:০৯

সেলিম সোহেল
প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:০৯

কঠোর কর্মসূচির হুমকি ব্যাটারিচালিত রিকশা-সংশ্লিষ্ট দুই সংগঠনের

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করার নির্দেশ দেন। এর পর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ করে আসছেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা। এবার সাত দিনের আলটিমেটামসহ বিভিন্ন দাবিতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দুটি সংগঠন।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) উভয় সংগঠন আলাদা অনুষ্ঠানে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দেয়।

ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ নামের একটি সংগঠন। শনিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে এ কর্মসূচি শুরু হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন বলেছেন, ‘‘সাত দিনের মধ্যে হাইকোর্টের রায় পুনর্বিবেচনা না করলে ৩০ নভেম্বর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’’

সমাবেশে দাবি জানানো হয়, রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান এবং ইজিবাইক চলাচলে নীতিমালা চূড়ান্ত করতে হবে। এসব যানবাহনের নিবন্ধন, চালকদের লাইসেন্স ও রুট পারমিট প্রদান করতে হবে। চালকদের প্রশিক্ষিত করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

খালেকুজ্জামান লিপন বলেন, ‘‘এখনো সারা দেশে আন্দোলন শুরু হয়নি। সারা দেশে প্রায় ৬০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর ৩ কোটি মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল। তাই, আপনারা সাবধান হয়ে যান।’’

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবদান আছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘৩৬ দিনের আন্দোলনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা আহত-নিহত ব্যক্তিদের আনা নেওয়া করেছেন। এর দায়ে উত্তরাতে আমাদের এক ভাইকে গুলি করে পা ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছিল। অভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪৮১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ২০০ থেকে ২৫০ জন ছাত্র। বাকিরা শ্রমজীবী। এর মধ্যে রিকশাশ্রমিকরাও আছেন।’’

এদিকে, ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহারসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন। এসব দাবি পূরণে সংগঠনটি আগামীকাল রোববার (২৪ নভেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিম।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘‘স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে আদালত ও শ্রমিকদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর নোংরা রাজনীতি আমরা অতীতে দেখেছি। গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, রাষ্ট্র ও সরকার এই রাজনীতি পরিহার করে গণমানুষের স্বার্থে পরিচালিত হবে। কিন্তু, হাইকোর্টের আদেশের ঘটনা দেশবাসীকে হতাশ করেছে। সরকারকে এই রাজনীতি পরিত্যাগ করতে হবে।’’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নেতারা বলেন, ‘‘ব্যাটারিচালিত যানবাহনের সংকট নিরসনে প্রথম প্রয়োজন মানবিকতাবোধ নিশ্চিত করা। মানবিকতার সঙ্গে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে পরিকল্পিত নগরায়নের পরিকল্পনা করলে দ্রুততম সময়ে সমাধান সম্ভব।’’

সমস্যা সমাধানে ১২ দফা দাবি তুলে ধরে বলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। দাবিগুলো হলো— ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। দেশের সড়ক উপযোগী নকশায় আধুনিকায়নসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্স ও যৌক্তিক রুট পারমিট দিতে হবে। চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

১২ দফা দাবির মধ্যে আরো আছে—শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা কমিটি গঠন করতে হবে। সড়কের লেন পদ্ধতি সচল ও সার্ভিস লেন নির্মাণ করতে হবে। আন্দোলনে আটক ও গ্রেপ্তারদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে গণপরিবহন ও শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। জব্দ করা সব ব্যাটারিচালিত যানবাহন ও ব্যাটারি মালিকের কাছে হস্তান্তর এবং নিলাম করা ব্যাটারির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। শ্রমিকদের ওপর সকল জুলুম-নির্যাতন-চাঁদাবাজি-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। মানবিক বিবেচনায় ব্যাটারিচালিত যানবাহনের পুঁজিকে নিরাপদ করে পর্যায়ক্রমে প্যাডেলচালিত বাহনের শ্রম থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই রায়ের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া মিরপুর, মালিবাগ, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, আগারগাঁও, নাখালপাড়া, রামপুরা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা। গতকাল শুক্রবার ঢাকার জুরাইনে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন রিকশাচালকরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: