ভোলা (দৌলতখান) সংবাদদাতা: ভোলা জেলার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন হলো ভোলা ২ আসন (বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান)। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ছিলো। বিশেষ করে স্বৈরাচারের দোসর তোফায়েল আহমেদ ও ভাতিজা মুকুলের দখলে ছিল এই আসনটি। তোফায়েল পরিবার ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাথে আতাতের রাজনীতি করে নিজেদের লঞ্চ ও অন্যান্য ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছিল হাফিজ ইব্রাহিম ও তার ভাই গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পরিবার। যার কারনে দুইবার মাইর খাওয়া দলটির নেতা-কর্মীরা হাফিজ ইব্রাহিমের প্রতি ক্ষুব্ধ।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতি ফজলুল করিম সাহেব ভোলা আসনে একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। যিনি বিপদ-আপদে মানুষের কাছে ছুটে যান। তিনি ভোলা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপনা করার পর অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ভোলার জাতীয় ঈদগাহের ইমাম ছিলেন।
কিন্তু ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার দখলদারিত্বের সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর এই আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি ঘাঁটি তৈরি করেছে বলে মনে করছেন সাধারণ জনতা। জামায়াতে ইসলামী এখন এই আসনে ইচ্ছে করলেই হাজার হাজার লোক মুহুর্তের ভেতরেই সমাগম করতে পারে, জামায়াতের সাম্প্রতিক মিছিল, মিটিং ও দলীয় কার্যক্রমের তদন্তে এমনটাই দেখা গেছে। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জামায়াতের সাথে জোট করলে এই আসন জামায়াতের জন্য আরো সহজ হয়ে যাবে। এছাড়াও ছোট ছোট দলগুলো জামায়াতের সাথে যুক্ত হলে জামায়াত এই আসনটি নিশ্চিতভাবেই নিতে পারবে।
অপরদিকে বিএনপি নেতা হাফিজ ইব্রাহিমের অপকর্মের কারণে এ আসনটি এখন জামায়াতের দখলে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি থেকে নমিনেশন প্রত্যাশী জাহাঙ্গীর আলম, ড. সিরাজুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম সমর্থকরা। এদিকে সাধারণ মানুষের মতামত নিতে গেলেও এই আসন জামায়াতের হাতে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি'র এক নেতা বলেন, এই আসনে বিএনপি'র কোন কর্মী নেই, যা আছে সবাই নেতা। তিনি বিদেশবার্তা প্রতিবেদকের সাথে বাজি ধরে বলেন, ভোলা ২ আসনে আপনি যদি বিএনপির কোন কর্মী আমাকে দেখাতে পারেন তাহলে আমি কর্মীপ্রতি আপনাকে ১,০০০ টাকা করে দেব। এখানে যা আছে সব নেতা, বিএনপি'র কোন কর্মী নাই। সবাই নিজেকে নেতা দাবি করে।
বিদেশবার্তার পক্ষ থেকে দৌলতখান বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে আগামী নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাইলে তারা বলেন, ভোলা ২ আসনে বিএনপি'র জন্য সম্ভাব্য বিজয় ছিল, কিন্তু হাফিজ ইব্রাহিম ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের অপকর্মের কারণে এটি এখন অনেকটাই জামায়াতে ইসলামী দখলে চলে গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, যেকোনো কাজের থেকে ৪০% পর্যন্ত কমিশন বাণিজ্য করেন বিএনপি নেতা হাফেজ ইব্রাহিম। বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখানে কোন কাজের টেন্ডার হলেই ৪০% দেওয়া লাগে হাফিজ ইব্রাহিমকে। অর্থাৎ প্রতি লাখে ৪০ হাজার টাকা তাকে দিতে হয়। তা না হলে কাজের টেন্ডার পাওয়া যায় না।
বিএনপি'র কমিটি বাণিজ্য, অভিযোগ রয়েছে এই আসনে বিএনপি'র যত কমিটি রয়েছে সবাই হাফিজ ইব্রাহিমের আনুগত, যার কারণে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। অর্থাৎ প্রত্যেকটি জায়গা থেকে নেতা-কর্মীরা ধান্দা করে হাফিজ ইব্রাহিমকে কমিশন দেয় এবং তারা লুটপাট করে খায়।
এ বিষয়ে জানতে দৌলতখানের স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদুর রহমান বিদেশবার্তাকে বলেন, ৫ আগস্ট এর আগে বোরহানউদ্দিন এবং দৌলতখানে বিএনপি'র কোন নেতা-কর্মী মাঠে, কিংবা রাজপথে পাওয়া যায় নাই। কিন্তু শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই নতুন নতুন নেতা-কর্মী দেখা যাচ্ছে। যাদেরকে ১৬ বছরেও দেখা যায় নাই। তবে বিএনপি'র কিছু ত্যাগী নেতাও আছে, যারা অন্যায় দুর্নীতি, চাঁদাবাজির সাথে জড়িত না থাকায় তাদেরকে কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয় না।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, এর আগে হাফিজ ইব্রাহিম যখন এই আসনে এমপি হন তখন ১২ থেকে ১৮ বছরের শিশুদের হাতেও অস্ত্র তুলে দিয়েছিলো তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। তৎকালীন সময়ের অস্ত্রের রাজনীতি এই আসনের মানুষদের এখনো কাঁদায়। সেই স্মৃতি মনে করে অনেকেই বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি নেতারা এই আসনের আওয়ামী লীগের মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের হুমকি ধামকি দিয়ে ও প্রভাব বিস্তার করে লুটপাট, দুর্নীতি করেই যাচ্ছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছ থেকে বড় একটি অংশ তারা লুটপাট করে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের আমলে যেসব সাধারণ লোক সরকারি সহযোগিতা পেতো সেগুলোও এখন বিএনপির লোকজন মেরে খাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের এক নেতা বিদেশ বার্তাকে বলেন, বিএনপি'র যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যে সমস্ত নেতারা রয়েছেন তাদের বেশিরভাগ নেতারা অপকর্ম করেই যাচ্ছে, আর এই নেতাদের প্রায় ৯৫% অশিক্ষিত। অর্থাৎ মেট্রিক পাশ করে নাই। তিনি বলেন, এসএসসি বা সমমান শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে বাংলাদেশের শিক্ষার হারে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু বিএনপি'র এই নেতাদের ৯৫% এসএসসি পাস করে নাই। অথচ আমার ধারণা জামায়াতে ইসলামীর ৯৫% লোক শিক্ষিত। বিএনপি'র এই অশিক্ষিত নেতাদের দাপটেই ভোলা ২ আসনের মানুষ এখন ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের মধ্য রয়েছে। শুধুমাত্র ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা শিক্ষিত।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি স্থানীয় লোকদের দাবি, বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র ও দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হলে, অশিক্ষিত, মূর্খদের কাছ থেকে নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিয়ে শিক্ষিত ও যোগ্য লোকদের হাতে তুলে দিতে হবে। এজন্য নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার বাধ্যবাধকতা দেখতে চান তারা।